Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
কিশোরগঞ্জে সিটিল্যাব হাসপাতালে অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু

আজ ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কিশোরগঞ্জে সিটিল্যাব হাসপাতালে অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা চিকিৎসকের অপেক্ষায় প্রসূতিকে নানা অজুহাতে আটকে রেখে সিজারিয়ান অপারেশনের পর চিকিৎসার নামে অবহেলা ও গাফিলতিতে এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। মারা যাওয়া নবজাতক জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মো. নাজমুল ও মোছা. তামান্না আক্তার দম্পতির সন্তান। গত ৬ই অক্টোবর বিকালে নবজাতক মৃত্যুর এ ঘটনার পর ওইদিন রাতেই কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রসূতি মোছা. তামান্না আক্তারের ভাই মো. হিমেল। এদিকে ঘটনা এবং থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই মালিকপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওঠেপড়ে লাগে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপি’র একজন শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে এ ব্যাপারে সালিশ দরবার বসে। সেখানে ক্ষমা প্রার্থনা করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এবং কিছু টাকাভর্তি একটি খাম পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি দফারফা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালের ট্রেড লাইসেন্স ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত কার্যক্রমের অনুমোদনের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। লাইসেন্স নবায়ন না করেই প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ‘ম্যানেজ’ হওয়ার প্রবণতার কারণে জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।

সিটিল্যাবে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অভিযোগকারী মো. হিমেল পাশর্^বর্তী ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সিংদই গ্রামের জিল্লু মিয়ার ছেলে ও মারা যাওয়া নবজাতকের মামা। থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রসূতি হওয়ার কারণে মোছা. তামান্না আক্তার বিগত দুই মাস ধরে পিত্রালয়ে ছিলেন। তাকে নিয়মিত চেকআপ করানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গত ৬ই অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তামান্না আক্তারের প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় ডাক্তার না পেয়ে তাকে দ্রুত জরুরী চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার প্রাইভেট ক্লিনিক সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালে নেওয়া হয়। ক্লিনিকটিতে প্রসূতি তামান্না আক্তারকে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তখন চিকিৎসক না থাকলেও অন্য কোনো ক্লিনিকে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে রোগীকে দেখার অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। এক পর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একজন চিকিৎসক ডেকে আনার পর ওই চিকিৎসক প্রসূতিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন এবং বাচ্চা প্রসব করান। বাচ্চা প্রসবের পর বাচ্চার অবস্থা ভালো না থাকার পরও ক্লিনিকটিতে বাচ্চাটিকে ভালো চিকিৎসা না করিয়ে এবং পরিবারের লোকজনকে না জানিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। এমনকি বাচ্চাটির কাছে পরিবারের লোকজনদের যেতে না দিয়ে তারা কালক্ষেপণ করে। আস্তে আস্তে নবজাতকটি নিস্তেজ হতে থাকে। ক্লিনিকের লোকজন যখন নবজাতকটিকে বাঁচানো সম্ভব না বুঝতে পারে, তখন পরিবারের লোকজনদের জানায়- ‘আপনাদের বাচ্চার অবস্থা ভালো নয়। আপনাদের বাচ্চাকে বাঁচাইতে হইলে তাড়াতাড়ি ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।” এই পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেটে পড়ে। পরক্ষণেই পরিবারের লোকজন বুঝতে পারেন, নবজাতকটি মারা গেছে। অভিযোগে বলা হয়, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষসহ কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের কর্তব্যের অবহেলা, গাফিলতি এবং ভুল চিকিৎসার জন্য নবজাতকটি মারা গেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক্লিনিকের লোকজন নানাভাবে চেষ্টা-তদ্বির করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) রাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে ক্লিনিকের অফিস কক্ষে দরবার-সালিশ হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, জেলা বিএনপি’র একজন শীর্ষ নেতাসহ দুইজন রাজনৈতিক নেতা, একজন ব্যবসায়ী ও কয়েকজন সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে বিষয়টি দরবারের মাধ্যমে রফাদফা হয়। সেখানে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়। এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একটি খামে ভরে ৫০-৬০ হাজার টাকা মারা যাওয়া নবজাতকের পরিবারের লোকজনদের হাতে দিলেও তারা তা ফিরিয়ে দেন। তবে পর্দার অন্তরালে বিষয়টি দফারফা করতে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নবজাতকের বাবা মো. নাজমুল বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দরবারে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ক্ষমা চান। আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন- তাদের স্টাফদের অবহেলা আছে। আমি তো আর আমার বাচ্চাকে ফেরৎ পাবো না। ক্ষমার উপরে তো কিছু নেই। হাসপাতালের গৌতম বাবু আমাদের একটা খাম দেয়। আমরা নিচে এসে তা আবার ফিরিয়ে দেই।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অভিযোগটি তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. অভিজিৎ শর্মা বলেন, লিখিত অভিযোগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের কাছে আসলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।
ঘটনার বিষয়ে সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালের ম্যানেজার শহীদ বলেন, দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে বিষয়টি শেষ হয়েছে। তবে তিনি মৃত্যু নিয়ে দফারফা হয় কি-না এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ